আন্দোলনের বিকল্প কেন নেই

মেজর আখতার (অব.) : অনেকেই বলাবলি করেন, আন্দোলন ছাড়া চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় সরকার পরিবর্তনের কোনো পথ খোলা নেই। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের উপায় হলো নির্বাচন। একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন করা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা। কিন্তু আজ প্রায় সবার মুখে মুখে জল্পনা-কল্পনা, নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের পথ বাংলাদেশের রাজনীতিতে রুদ্ধ। বর্তমানে নির্বাচনের ন্যূনতম সুযোগ সরকার খোলা রাখেনি। বিগত ১৪ বছরের শাসনের মাধ্যমে সরকার অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তরিত করেছে। সরকার নির্বাচনব্যবস্থা এমনভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রেখেছে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ রাখেনি। সরকার পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সামরিক শক্তি ও নির্বাচন কমিশনকে তাদের পূর্ণ কবজায় নিয়ে রেখেছে, যেখানে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখাই তাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের এতটুকু সমালোচনা বা বিপক্ষে অবস্থান রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হয়ে গেছে। দেশের তাবৎ বিরোধী পক্ষের দুর্বল অবস্থা ও সবল নেতৃত্বের অভাবে তাদের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে গেছে। বিরোধী রাজনীতির দুর্বলতার কারণে কেউ শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছে না। ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছে। বর্তমান সরকার পরাক্রমশালী কিছু নয়। ভালো করে ঝাঁকি দিতে পারলে এ সরকার অনেক আগেই ঝরে যেতে পারত! কিন্তু বিরোধী দলের দৃঢ়তা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাবে বিরোধী দলের যোগ্য, কর্মক্ষম ও পারদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বও গড়ে উঠতে পারছে না, যারা সরকারের জন্য হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু আজ রাজনৈতিক নেতৃত্বে চাটুকার, ব্যক্তির প্রতি আদর্শহীন আনুগত্য ও ধান্দাবাজরা রাজনীতির মূলধারার আধিপত্য বিস্তার করে রাখছে, যার ফলে সরকার ক্ষমতায় থাকার অতিরিক্ত সময় ও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। যা হোক, অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুধু তিক্ততাই বাড়াবে, যা সরকারের পক্ষেই যাবে। এখন সবাইকে সামনের দিকে তাকাতে হবে। অনেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবা শুরু করেছেন। শুধু ভাবা নয়, অনেকে আবার মাঠেও নেমে গেছেন। নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা খুবই শুভ। সরকারও চাচ্ছে সবাই এখন নির্বাচন নিয়ে মাঠে নামুক, মাঠ গরম হয়ে উঠুক, নির্বাচনের খেলা জমে উঠুক। এর ফলে সরকার তার পরিকল্পনা মোতাবেক আগামী নির্বাচনকেও পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করে নিতে পারবে। নির্বাচন নিয়ে সরকার খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে। সরকার তার নির্বাচনের নীলনকশা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। সরকার এখনো আগাম নির্বাচনের চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দেয়নি। তাই সরকারপ্রধান এ বছরই ভারত সফর সমাপ্ত করছেন। এবারের ভারত সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এবারের ভারত সফরে যে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা ও বোঝাপড়া হবে, তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কাফেলা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়াতে জনগণের কাছে অনেকটা পরিষ্কার। আগাম নির্বাচন না হলেও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর আগামী নির্বাচনে যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে তা অস্বীকার করার কারও উপায় নেই। বাংলাদেশ শুধু ভারতের প্রতিবেশীই নয়, ভারতের ধর্মবর্ণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগী এবং যে-কোনো সময় তারা ভারতের বৈরী অবস্থানে চলে যেতে পারে। কাজেই বাংলাদেশের রাজনীতি তথা নির্বাচনে ভারত তার পূর্ণ প্রভাব যে-কোনো মূল্যে ধরে রাখতে চাইবে তা অতি স্বাভাবিক। আমাদের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন ঝানু পেশাদার অভিজ্ঞ কূটনীতিক। তিনি কখনই বেফাঁস কথা বলবেন না এবং বলতে পারেন না।

সরকারপ্রধান নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই ভারত সফরে গেছেন। ইতোমধ্যে সরকার তার অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন কমিশন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাপানকে তাদের আস্থায় নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আগাম নির্বাচন না হলে আগামী নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেই হবে। সরকার ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলোকেও তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। আন্দোলন খেলার জন্য বিরোধী দলকে আপাতত উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে ঢাকায় কোনো উটকো ঝামেলা না হয়। সরকার সেই সঙ্গে কোন কোন উপজেলায় বিরোধী দলের কেমন অবস্থান তা সরেজমিন পরখ করে নিচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের আনুগত্য ও কার্যক্ষমতা কোন পর্যায়ের তা-ও যাচাই করার সুযোগ আন্দোলনের নামে বিরোধী দল অত্যন্ত বিশ্বস্তভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলায় উপজেলায় আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি উপজেলায় রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু প্রতি জেলার একটি করে উপজেলায় কর্মসূচি দেওয়ার কারণে পুলিশের পক্ষে সে আন্দোলন দমাতে কমই বেগ পেতে হচ্ছে। অবশ্য সরকারপ্রধান আন্দোলনে বাধা দেবেন না এ ধরনের একটি ধাঁধা বাজারে ছাড়া হয়েছিল বলে সরকারবান্ধব বিরোধী দলের ধারণা ছিল তারা উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলন দিলে খালি মাঠে গোল দেওয়ার একটি সুযোগ নেওয়া যাবে! কিন্তু বাস্তবে ঘটে গেল উল্টো। মাঝখান থেকে অপ্রয়োজনে কয়েকটি প্রাণহানি হলো, শত শত নেতা-কর্মী পুলিশের আঘাতে আহত হলেন এবং হাজার হাজার নেতা-কর্মী নতুন করে মামলার আসামি হলেন। আগামী নির্বাচনের প্রাক্কালে পুলিশ এসব আসামি ধরে ধরে জেলে ভরে রাখবে যাতে তাঁরা নির্বাচনের মাঠে নামতে না পারেন। কেন যেন কোন অজ্ঞাত কারণে বিরোধী দলের সব কর্মসূচি সরকারের অনুকূলে চলে যায়! অথচ যদি আন্দোলনের এ কর্মসূচিটি একযোগে সব উপজেলায় দেওয়া হতো তাহলে রাজনৈতিক চিত্র অন্যরকম হতে পারত। যা হোক, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। তবে বিরোধী দলের পক্ষে নির্বাচনে যাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল। মনে হয় না, নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে মাঠে নামতে সরকার আর কোনো সুযোগ দেবে।

 

সবাই জানে এবং মানে যে, ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ ও পদ্ধতি হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন গণতান্ত্রিক রীতিনীতি। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে নতুন কেউ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবে এবং একইভাবে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা থেকে সরে যাবে। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই সবাই নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবারই লক্ষ্য থাকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার; কিন্তু নির্বাচনে একজন জয়ী হয় এবং বাকি সবাই পরাজিত হয়। নির্বাচনের ফল সবাই মেনে নেয় এবং মেনে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু বর্তমানে এ শাস্ত্রীয় অবস্থাটি বিরাজমান নয়। যার ফলে সবার পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিবেশ সুদূরপরাহত। এ অবস্থাটি আরও বেশি জটিল করে দিয়েছে নির্বাচন সম্পর্কিত সাংবিধানিক শর্ত। সংবিধানের ১২৩(৩) (ক) ধারার শর্তে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, এ দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ এখন দেখা যাক (ক) উপ-দফায় কী বলা আছে- ওই উপ-দফায় বলা আছে ‘(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্য সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ তার মানে সংসদ বহাল রেখেই সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনের পরও চলমান সংসদ যথারীতি বহাল তবিয়তে থাকবে। সংসদের মেয়াদের সাংবিধানিক ধারা পরিবর্তনযোগ্য। সংসদ তথা সরকার মনে করলে দেশ ও জাতির তথাকথিত স্বার্থে এ ধারায় বর্ণিত মেয়াদ সংকোচন বা পরিবর্ধন সাংবিধানিকভাবে যে-কোনো সময় নির্দ্বিধায় করতে পারে। সংবিধান এতে কোনো বাধা হবে না। সংবিধানের এ শর্ত বহাল রেখে নির্বাচনে যাওয়া মানেই হলো আরেকটি কালের জন্য সরকারকে বৈধতা দিয়ে দেওয়া। তা ছাড়া ওই নির্বাচনে জয়লাভ করলেও নতুন সংসদ কখনই কার্যভার গ্রহণ করতে পারবে না। সরকার তার সব শক্তি দিয়ে সেই সংসদ নির্বাচন বাতিল করে দেবে। তখন চূড়ান্ত আন্দোলন করা ছাড়া বিরোধী দলের সামনে কোনো পথ খোলা থাকবে না।

 

সংসদ সাংবিধানিকভাবে বহাল তবিয়তে রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে যদি কেউ ভাবিত না হন তাহলে বলা যাবে, তিনি বা তারা সরকারের মতো ভাবতেই অভ্যস্ত। পুলিশ, বেসামরিক-সামরিক প্রশাসন, বিচার বিভাগ, প্রভাবশালী ব্যবসায়িক মহল, তাবৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থা সরকারের শক্ত মুঠির মধ্যে এবং তারা সবাই সরকারের ওপর তাদের কায়েমি স্বার্থে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। দেশের এই প্রভাশালীদের কোনো সহানুভূতি বিরোধী দলের কারও প্রতি আছে এ রকম কোনো আভাসও দৃশ্যমান নয়। একই অবস্থা বিদেশি শক্তিদের বেলায়ও। ভারত তার আঞ্চলিক ও ভূরাজনীতির স্বার্থে বর্তমান সরকারের অনন্তকালের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পক্ষে। এতে কারও বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তা ছাড়া বিরোধী দলের কারও রাজনীতিতে বা আঞ্চলিক নীতিতে ভারতকে তুষ্ট করার মতো কোনো বাতচিৎও দেখা যায় না। কাজেই ভারতের অবস্থান পরিবর্তন হওয়ার মতো কোনো আলামতও নেই। তবে খোদ সরকার যদি কোনো স্বার্থের সংঘাতের কারণে ভারতের বৈরী হয়ে যায় তাহলে অন্য কথা। কিন্তু সে সুযোগ নেওয়ার রাজনীতিও বিরোধী দলে প্রচ- অভাব।

 

আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এক বড় অংশীদার হলো নিকট-প্রতিবেশী চীন। যারা আমাদের উন্নয়নের মূল সহায়ক পক্ষ। চীন ব্যাপক হারে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। সব বিনিয়োগ হচ্ছে সরকারের সঙ্গে এবং সরকারের গৃহীত উন্নয়ননীতির আওতায়। কোনো বিরোধী দল সরকারের উন্নয়ননীতি সমর্থন করে না বা বর্তমান সরকারের উন্নয়নধারা অব্যাহত রাখার কোনো ইতিবাচক বক্তব্য দেয় না। তার মানে সরকার পরিবর্তন হলে চীনের সব বিনিয়োগ প্রচ- ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। কাজেই সংগত কারণেই চীন কোনো প্রকার ঝুঁকির মধ্যে যাবে না। ক্ষমতার পালাবদলের চেয়ে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা থাকাই চীনের কাছে অনেক বেশি কাম্য, তা বুঝতে নিশ্চয় কারও দেরি হওয়ার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্র তথা জাতিসংঘ রোহিঙ্গা ইস্যুটি তাদের আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি ও শরণার্থী ব্যবসার স্বার্থে প্রলম্বিত করার পক্ষে। বর্তমান সরকার তাদের কায়েমি স্বার্থে এবং নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আকাক্সক্ষায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের পক্ষে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। পক্ষান্তরে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের রোহিঙ্গা ইস্যুতে পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো জোরালো বক্তব্য বা অবস্থান নেই। কাজেই সরকার পরিবর্তন হলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্র তথা জাতিসংঘের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে যাবে। ফলে তারাও পালাবদলের চেয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পক্ষে বেশি আগ্রহী হওয়াই স্বাভাবিক। রাশিয়া এখন আমাদের দেশে নতুন বাজার খোলার স্বপ্নে বিভোর। বর্তমান সরকার ছাড়া আমাদের দেশে তাদের আর তেমন কোনো বন্ধু নেই। সেখানে তারা কোন দুঃখে পালাবদলে সহায়তা করবে?

 

মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলমানপ্রধান রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোনো সখ্য নেই। তাদের কাছে বিরোধী দলের রাজনীতিও স্বচ্ছ নয়। তারাও কেন যেন আমাদের বিরোধী দলের ওপর আস্থা রাখতে পারেছে না। বিরোধী দলও ভবিষ্যৎ রাজনীতির তেমন কোনো আশাব্যঞ্জক আলো দেখাতে পারছে না। একটি বৃহত্তম মুসলমান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বৃহৎ বিরোধী দলের রাজনৈতিক কোনো কর্মপরিকল্পনাও দৃশ্যমান নয়। ফলে মুসলমান রাষ্ট্রগুলোও পালাবদলের পক্ষে অবস্থান নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলো উদার রাজনীতির পক্ষে। তারা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে বিরোধী শক্তির অবস্থানও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তাদের কারও অবস্থান স্বচ্ছ নয়। এ ব্যাপারে অবশ্য সরকারের অবস্থান অনেক বেশি স্পষ্ট এবং ধর্ম নিয়ে তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ। ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যরাও ধারাবাহিকতার পক্ষে। ওই দিকে জাপান ইভিএমের পক্ষে। কিন্তু ইভিএমের ব্যাপারে বিরোধী শক্তির অবস্থানও জোরালো নয়। ভাবখানা হলো, বাধ্য হলে মেনে নেব। ফলে জাপানও ধারাবাহিকতার পক্ষে।

 

আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে হাত-পা বেঁধে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া। সে নির্বাচনে বিএনপি বা যে-কোনো বিরোধী দল জয়লাভ করলে সে দলকে বর্তমান সরকার কোনো অবস্থাতেই ক্ষমতায় যেতে দেবে না। আবার যেভাবে দিনের ভোট আগের রাতে করানোর পরও দেশের সংবাদমাধ্যম ও বিদেশি শক্তি প্রতিবাদ না করে অভিনন্দন জানিয়েছিল তেমনি আগামী নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েই জয় ছিনিয়ে নেবে এবং তা সবাই সমর্থনও করবে।। তখন সর্বাত্মক আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। শেষমেশ যখন আন্দোলন করেই ফয়সালায় আসতে হবে তাহলে নির্বাচনের জন্য সময় নষ্ট না করে এখনই চূড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সিদ্ধান্ত রাজপথেই আসবে। আন্দোলন ছাড়া বিরোধী দলের কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলন উপজেলা বা জেলায় নয়, হতে হবে রাজধানীতে এবং সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে আন্দোলনের মূল নেতাকে। আন্দোলনে চামচাদের নেতৃত্বে কেউ মাঠে নামবে না। রাজধানীর রাজপথে নেতা-কর্মীরা আত্মাহুতি দেবে আর লন্ডন থেকে তাঁর পারিষদ নিয়ে এসে তারা সেই আত্মাহুতির ফল ভোগ করবে সেই রাজনীতি কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না। ঢাকার রাজপথে হয় নেতা সশরীরে উপস্থিত থাকবেন অথবা অন্য কাউকে ক্ষমতা দিয়ে দায়িত্ব দিতে হবে। পরিবর্তন আসবেই আসবে। জয় হবেই হবে। জনগণ নেতা চায়, যার কথায় জীবন দেবে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য   । সূএ : বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চার ডাকাত গ্রেফতার

» শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ নির্বাচন কমিশনার

» দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান ফারুকের

» সেনাবাহিনীর অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

» যেসব এলাকায় আজ রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাস থাকবে না

» অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি উইমেনস চেম্বার অফ কমার্সের আয়োজন এলান গালা এন্ড চ্যারিটি ইভিনিং অনুষ্ঠিত

» ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত,আহত ২

» পাইরেসির শিকার শাকিব খানের ‘দরদ’

» এশিয়া কাপ জয়ের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ল বাংলাদেশ দল

» পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আন্দোলনের বিকল্প কেন নেই

মেজর আখতার (অব.) : অনেকেই বলাবলি করেন, আন্দোলন ছাড়া চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় সরকার পরিবর্তনের কোনো পথ খোলা নেই। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের উপায় হলো নির্বাচন। একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন করা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা। কিন্তু আজ প্রায় সবার মুখে মুখে জল্পনা-কল্পনা, নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের পথ বাংলাদেশের রাজনীতিতে রুদ্ধ। বর্তমানে নির্বাচনের ন্যূনতম সুযোগ সরকার খোলা রাখেনি। বিগত ১৪ বছরের শাসনের মাধ্যমে সরকার অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তরিত করেছে। সরকার নির্বাচনব্যবস্থা এমনভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রেখেছে যে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ রাখেনি। সরকার পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সামরিক শক্তি ও নির্বাচন কমিশনকে তাদের পূর্ণ কবজায় নিয়ে রেখেছে, যেখানে বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখাই তাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের এতটুকু সমালোচনা বা বিপক্ষে অবস্থান রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হয়ে গেছে। দেশের তাবৎ বিরোধী পক্ষের দুর্বল অবস্থা ও সবল নেতৃত্বের অভাবে তাদের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে গেছে। বিরোধী রাজনীতির দুর্বলতার কারণে কেউ শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছে না। ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছে। বর্তমান সরকার পরাক্রমশালী কিছু নয়। ভালো করে ঝাঁকি দিতে পারলে এ সরকার অনেক আগেই ঝরে যেতে পারত! কিন্তু বিরোধী দলের দৃঢ়তা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাবে বিরোধী দলের যোগ্য, কর্মক্ষম ও পারদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বও গড়ে উঠতে পারছে না, যারা সরকারের জন্য হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু আজ রাজনৈতিক নেতৃত্বে চাটুকার, ব্যক্তির প্রতি আদর্শহীন আনুগত্য ও ধান্দাবাজরা রাজনীতির মূলধারার আধিপত্য বিস্তার করে রাখছে, যার ফলে সরকার ক্ষমতায় থাকার অতিরিক্ত সময় ও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। যা হোক, অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুধু তিক্ততাই বাড়াবে, যা সরকারের পক্ষেই যাবে। এখন সবাইকে সামনের দিকে তাকাতে হবে। অনেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবা শুরু করেছেন। শুধু ভাবা নয়, অনেকে আবার মাঠেও নেমে গেছেন। নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা খুবই শুভ। সরকারও চাচ্ছে সবাই এখন নির্বাচন নিয়ে মাঠে নামুক, মাঠ গরম হয়ে উঠুক, নির্বাচনের খেলা জমে উঠুক। এর ফলে সরকার তার পরিকল্পনা মোতাবেক আগামী নির্বাচনকেও পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করে নিতে পারবে। নির্বাচন নিয়ে সরকার খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে। সরকার তার নির্বাচনের নীলনকশা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। সরকার এখনো আগাম নির্বাচনের চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দেয়নি। তাই সরকারপ্রধান এ বছরই ভারত সফর সমাপ্ত করছেন। এবারের ভারত সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এবারের ভারত সফরে যে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা ও বোঝাপড়া হবে, তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কাফেলা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়াতে জনগণের কাছে অনেকটা পরিষ্কার। আগাম নির্বাচন না হলেও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর আগামী নির্বাচনে যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে তা অস্বীকার করার কারও উপায় নেই। বাংলাদেশ শুধু ভারতের প্রতিবেশীই নয়, ভারতের ধর্মবর্ণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগী এবং যে-কোনো সময় তারা ভারতের বৈরী অবস্থানে চলে যেতে পারে। কাজেই বাংলাদেশের রাজনীতি তথা নির্বাচনে ভারত তার পূর্ণ প্রভাব যে-কোনো মূল্যে ধরে রাখতে চাইবে তা অতি স্বাভাবিক। আমাদের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন ঝানু পেশাদার অভিজ্ঞ কূটনীতিক। তিনি কখনই বেফাঁস কথা বলবেন না এবং বলতে পারেন না।

সরকারপ্রধান নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই ভারত সফরে গেছেন। ইতোমধ্যে সরকার তার অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন কমিশন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাপানকে তাদের আস্থায় নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আগাম নির্বাচন না হলে আগামী নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেই হবে। সরকার ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলোকেও তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। আন্দোলন খেলার জন্য বিরোধী দলকে আপাতত উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে ঢাকায় কোনো উটকো ঝামেলা না হয়। সরকার সেই সঙ্গে কোন কোন উপজেলায় বিরোধী দলের কেমন অবস্থান তা সরেজমিন পরখ করে নিচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের আনুগত্য ও কার্যক্ষমতা কোন পর্যায়ের তা-ও যাচাই করার সুযোগ আন্দোলনের নামে বিরোধী দল অত্যন্ত বিশ্বস্তভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলায় উপজেলায় আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি উপজেলায় রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু প্রতি জেলার একটি করে উপজেলায় কর্মসূচি দেওয়ার কারণে পুলিশের পক্ষে সে আন্দোলন দমাতে কমই বেগ পেতে হচ্ছে। অবশ্য সরকারপ্রধান আন্দোলনে বাধা দেবেন না এ ধরনের একটি ধাঁধা বাজারে ছাড়া হয়েছিল বলে সরকারবান্ধব বিরোধী দলের ধারণা ছিল তারা উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলন দিলে খালি মাঠে গোল দেওয়ার একটি সুযোগ নেওয়া যাবে! কিন্তু বাস্তবে ঘটে গেল উল্টো। মাঝখান থেকে অপ্রয়োজনে কয়েকটি প্রাণহানি হলো, শত শত নেতা-কর্মী পুলিশের আঘাতে আহত হলেন এবং হাজার হাজার নেতা-কর্মী নতুন করে মামলার আসামি হলেন। আগামী নির্বাচনের প্রাক্কালে পুলিশ এসব আসামি ধরে ধরে জেলে ভরে রাখবে যাতে তাঁরা নির্বাচনের মাঠে নামতে না পারেন। কেন যেন কোন অজ্ঞাত কারণে বিরোধী দলের সব কর্মসূচি সরকারের অনুকূলে চলে যায়! অথচ যদি আন্দোলনের এ কর্মসূচিটি একযোগে সব উপজেলায় দেওয়া হতো তাহলে রাজনৈতিক চিত্র অন্যরকম হতে পারত। যা হোক, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। তবে বিরোধী দলের পক্ষে নির্বাচনে যাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল। মনে হয় না, নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে মাঠে নামতে সরকার আর কোনো সুযোগ দেবে।

 

সবাই জানে এবং মানে যে, ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ ও পদ্ধতি হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন গণতান্ত্রিক রীতিনীতি। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে নতুন কেউ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবে এবং একইভাবে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা থেকে সরে যাবে। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই সবাই নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সবারই লক্ষ্য থাকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার; কিন্তু নির্বাচনে একজন জয়ী হয় এবং বাকি সবাই পরাজিত হয়। নির্বাচনের ফল সবাই মেনে নেয় এবং মেনে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু বর্তমানে এ শাস্ত্রীয় অবস্থাটি বিরাজমান নয়। যার ফলে সবার পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিবেশ সুদূরপরাহত। এ অবস্থাটি আরও বেশি জটিল করে দিয়েছে নির্বাচন সম্পর্কিত সাংবিধানিক শর্ত। সংবিধানের ১২৩(৩) (ক) ধারার শর্তে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, এ দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ এখন দেখা যাক (ক) উপ-দফায় কী বলা আছে- ওই উপ-দফায় বলা আছে ‘(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্য সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ তার মানে সংসদ বহাল রেখেই সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনের পরও চলমান সংসদ যথারীতি বহাল তবিয়তে থাকবে। সংসদের মেয়াদের সাংবিধানিক ধারা পরিবর্তনযোগ্য। সংসদ তথা সরকার মনে করলে দেশ ও জাতির তথাকথিত স্বার্থে এ ধারায় বর্ণিত মেয়াদ সংকোচন বা পরিবর্ধন সাংবিধানিকভাবে যে-কোনো সময় নির্দ্বিধায় করতে পারে। সংবিধান এতে কোনো বাধা হবে না। সংবিধানের এ শর্ত বহাল রেখে নির্বাচনে যাওয়া মানেই হলো আরেকটি কালের জন্য সরকারকে বৈধতা দিয়ে দেওয়া। তা ছাড়া ওই নির্বাচনে জয়লাভ করলেও নতুন সংসদ কখনই কার্যভার গ্রহণ করতে পারবে না। সরকার তার সব শক্তি দিয়ে সেই সংসদ নির্বাচন বাতিল করে দেবে। তখন চূড়ান্ত আন্দোলন করা ছাড়া বিরোধী দলের সামনে কোনো পথ খোলা থাকবে না।

 

সংসদ সাংবিধানিকভাবে বহাল তবিয়তে রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে যদি কেউ ভাবিত না হন তাহলে বলা যাবে, তিনি বা তারা সরকারের মতো ভাবতেই অভ্যস্ত। পুলিশ, বেসামরিক-সামরিক প্রশাসন, বিচার বিভাগ, প্রভাবশালী ব্যবসায়িক মহল, তাবৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থা সরকারের শক্ত মুঠির মধ্যে এবং তারা সবাই সরকারের ওপর তাদের কায়েমি স্বার্থে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। দেশের এই প্রভাশালীদের কোনো সহানুভূতি বিরোধী দলের কারও প্রতি আছে এ রকম কোনো আভাসও দৃশ্যমান নয়। একই অবস্থা বিদেশি শক্তিদের বেলায়ও। ভারত তার আঞ্চলিক ও ভূরাজনীতির স্বার্থে বর্তমান সরকারের অনন্তকালের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পক্ষে। এতে কারও বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তা ছাড়া বিরোধী দলের কারও রাজনীতিতে বা আঞ্চলিক নীতিতে ভারতকে তুষ্ট করার মতো কোনো বাতচিৎও দেখা যায় না। কাজেই ভারতের অবস্থান পরিবর্তন হওয়ার মতো কোনো আলামতও নেই। তবে খোদ সরকার যদি কোনো স্বার্থের সংঘাতের কারণে ভারতের বৈরী হয়ে যায় তাহলে অন্য কথা। কিন্তু সে সুযোগ নেওয়ার রাজনীতিও বিরোধী দলে প্রচ- অভাব।

 

আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এক বড় অংশীদার হলো নিকট-প্রতিবেশী চীন। যারা আমাদের উন্নয়নের মূল সহায়ক পক্ষ। চীন ব্যাপক হারে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। সব বিনিয়োগ হচ্ছে সরকারের সঙ্গে এবং সরকারের গৃহীত উন্নয়ননীতির আওতায়। কোনো বিরোধী দল সরকারের উন্নয়ননীতি সমর্থন করে না বা বর্তমান সরকারের উন্নয়নধারা অব্যাহত রাখার কোনো ইতিবাচক বক্তব্য দেয় না। তার মানে সরকার পরিবর্তন হলে চীনের সব বিনিয়োগ প্রচ- ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। কাজেই সংগত কারণেই চীন কোনো প্রকার ঝুঁকির মধ্যে যাবে না। ক্ষমতার পালাবদলের চেয়ে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা থাকাই চীনের কাছে অনেক বেশি কাম্য, তা বুঝতে নিশ্চয় কারও দেরি হওয়ার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্র তথা জাতিসংঘ রোহিঙ্গা ইস্যুটি তাদের আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি ও শরণার্থী ব্যবসার স্বার্থে প্রলম্বিত করার পক্ষে। বর্তমান সরকার তাদের কায়েমি স্বার্থে এবং নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আকাক্সক্ষায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের পক্ষে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। পক্ষান্তরে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের রোহিঙ্গা ইস্যুতে পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো জোরালো বক্তব্য বা অবস্থান নেই। কাজেই সরকার পরিবর্তন হলে রোহিঙ্গা ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্র তথা জাতিসংঘের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে যাবে। ফলে তারাও পালাবদলের চেয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পক্ষে বেশি আগ্রহী হওয়াই স্বাভাবিক। রাশিয়া এখন আমাদের দেশে নতুন বাজার খোলার স্বপ্নে বিভোর। বর্তমান সরকার ছাড়া আমাদের দেশে তাদের আর তেমন কোনো বন্ধু নেই। সেখানে তারা কোন দুঃখে পালাবদলে সহায়তা করবে?

 

মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলমানপ্রধান রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোনো সখ্য নেই। তাদের কাছে বিরোধী দলের রাজনীতিও স্বচ্ছ নয়। তারাও কেন যেন আমাদের বিরোধী দলের ওপর আস্থা রাখতে পারেছে না। বিরোধী দলও ভবিষ্যৎ রাজনীতির তেমন কোনো আশাব্যঞ্জক আলো দেখাতে পারছে না। একটি বৃহত্তম মুসলমান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বৃহৎ বিরোধী দলের রাজনৈতিক কোনো কর্মপরিকল্পনাও দৃশ্যমান নয়। ফলে মুসলমান রাষ্ট্রগুলোও পালাবদলের পক্ষে অবস্থান নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রগুলো উদার রাজনীতির পক্ষে। তারা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে বিরোধী শক্তির অবস্থানও ধোঁয়াশাপূর্ণ। তাদের কারও অবস্থান স্বচ্ছ নয়। এ ব্যাপারে অবশ্য সরকারের অবস্থান অনেক বেশি স্পষ্ট এবং ধর্ম নিয়ে তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ। ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যরাও ধারাবাহিকতার পক্ষে। ওই দিকে জাপান ইভিএমের পক্ষে। কিন্তু ইভিএমের ব্যাপারে বিরোধী শক্তির অবস্থানও জোরালো নয়। ভাবখানা হলো, বাধ্য হলে মেনে নেব। ফলে জাপানও ধারাবাহিকতার পক্ষে।

 

আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে হাত-পা বেঁধে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া। সে নির্বাচনে বিএনপি বা যে-কোনো বিরোধী দল জয়লাভ করলে সে দলকে বর্তমান সরকার কোনো অবস্থাতেই ক্ষমতায় যেতে দেবে না। আবার যেভাবে দিনের ভোট আগের রাতে করানোর পরও দেশের সংবাদমাধ্যম ও বিদেশি শক্তি প্রতিবাদ না করে অভিনন্দন জানিয়েছিল তেমনি আগামী নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েই জয় ছিনিয়ে নেবে এবং তা সবাই সমর্থনও করবে।। তখন সর্বাত্মক আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। শেষমেশ যখন আন্দোলন করেই ফয়সালায় আসতে হবে তাহলে নির্বাচনের জন্য সময় নষ্ট না করে এখনই চূড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সিদ্ধান্ত রাজপথেই আসবে। আন্দোলন ছাড়া বিরোধী দলের কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলন উপজেলা বা জেলায় নয়, হতে হবে রাজধানীতে এবং সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে আন্দোলনের মূল নেতাকে। আন্দোলনে চামচাদের নেতৃত্বে কেউ মাঠে নামবে না। রাজধানীর রাজপথে নেতা-কর্মীরা আত্মাহুতি দেবে আর লন্ডন থেকে তাঁর পারিষদ নিয়ে এসে তারা সেই আত্মাহুতির ফল ভোগ করবে সেই রাজনীতি কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না। ঢাকার রাজপথে হয় নেতা সশরীরে উপস্থিত থাকবেন অথবা অন্য কাউকে ক্ষমতা দিয়ে দায়িত্ব দিতে হবে। পরিবর্তন আসবেই আসবে। জয় হবেই হবে। জনগণ নেতা চায়, যার কথায় জীবন দেবে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য   । সূএ : বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com